সম্প্রতি ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনী। এটি নায়ক এম এ জলিল অনন্ত পরিচালিত প্রথম সিনেমা। ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে ছবিটির আগামী ঈদে মুক্তির বিষয়টিও ঘোষণা দেওয়া হয়।
শুনলাম হাতের আঙুল নাকি আপনাকে বেশ ভোগাচ্ছে

ঠিকই শুনেছেন। দুই সপ্তাহ ধরে বাম হাতের একটা আঙুল নিয়ে ভারী যন্ত্রণায় আছি। গত সপ্তাহে একবার ব্যাংকক গিয়েছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শে কাল দুপুরে (আজ বৃহস্পতিবার) আবারও যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় চিকিত্সা শেষে ১৪ জুলাই দেশে ফিরব।
‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটি ঈদে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি কি চূড়ান্ত?
এখন পর্যন্ত ঈদে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেভাবে সব প্রস্তুতিও নিচ্ছি।
ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত অনেকেই বলছেন, ছবিটির পুরো কাহিনির সঙ্গে আপনার জীবনের অনেক মিল …

যারা এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তাঁরা ঠিকই বলেছেন। ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটিতে আমি আমাকে তুলে ধরেছি। আমি যেমন সত্ ও সফল একজন ব্যবসায়ী, পাশাপাশি সুপার হিরো ছবিতেও সেটাই দেখাতে চেয়েছি। সব কিছুর পরে, মানুষ যে মানুষের জন্যই ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটি দিয়ে তা দেখানোর চেষ্টা করেছি।
বিষয়টা ঠিক তা নয়। অনেকেই বলছেন, মাস তিনেক আগে আপনার ও নায়িকা বর্ষার (অনন্তর স্ত্রী) মধ্যকার যে পারিবারিক কলহের কথা দেশের মানুষ জেনেছেন তার সঙ্গে ছবির গল্পের হুবহু মিল! এমনকি কেউ কেউ বলেছেন এ ছবিটির মাধ্যমে নাকি বর্ষাকে হেয় করা হয়েছে?
বর্ষাকে হেয় করার কোনো প্রশ্নই আসে না। যারা বিষয়টিকে ওরকম কিছু মনে করছেন, তাদের ভুল ধারণা। শুধু বর্ষা কেন? ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটির গল্প মডেলিং, অভিনয়সহ মিডিয়ার অন্য সেক্টরে কাজ করতে আসা প্রত্যেক মেয়ের সঙ্গে সমাজের মুখোশধারী মানুষদের ঘটে যাওয়া গল্পই। বর্ষাকে শুধুমাত্র ওসব প্রতারণার শিকার হওয়া মেয়েদের প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে বলতে পারেন। আর আমাদের দুজনের মধ্যে যে ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে তার অনেক আগেই কিন্তু ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবির শুটিং ডাবিংসহ সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তাই আমাদের পারিবারিক ঘটনার সঙ্গে দয়া করে ছবিটির মিল খুঁজতে যাবেন না আশা করি।
‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটির এমন গল্প বেছে নেওয়ার কারণ কি?
আমরা সবাই আধুনিকতার কথা বলি। পরিবর্তনের কথা বলি। স্বাধীনতার কথাও বলি। কিন্তু তারপরও আমরা যেন নিজেদের কোনোভাবেই পরিবর্তন করতে পারিনি। আমরা এখনো মুখোশধারী রয়ে গেছি। আমরা সবাই জানি মিডিয়াতে কাজ করতে এসে একটা মেয়েকে নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হতে হয়। মিডিয়াতে কাজ করার ক্ষেত্র যত বাড়ছে প্রতারক চক্রগুলো তাদের প্রতারণার নতুন নতুন জাল বুনতে শুরু করে। হয়রানির শিকার হতে হয় সম্ভাবনাময় ছেলে-মেয়েদের। একটা সময় মিডিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ভালো ও শিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা। আমার কাছে মনে হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে কাজ করা উচিত। আর তাই ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটির গল্প বাছাইয়ের সিদ্ধান্তটা সেরকম করতে হয়েছে।
‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটি তো কান চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন?
আমি নিজ উদ্যোগে ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটি কান চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। অনেক ভারতীয়রা ছবিটি দেখে গল্পটির বেশ প্রশংসা করেছেন। এমনকি নির্মাণ নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। বিষয়টি কিন্তু আমার অনেক ভালো লেগেছে।
আপনার বেশিরভাগ ছবিই বড় বাজেটের। আপনি কি মনে করেন, বড় বাজেটের ছবি হলেই তা হিট হয়?
বিগ বাজেট হলে ছবি হিট হবে এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করি না। আবার বাজেট ভালো না হলে তো মনের মতো ছবিও তৈরি করা সম্ভব হয় না। একটা ছবির সবচেয়ে প্রধান উপাদান হচ্ছে গল্প। যা আমি সব সময় করে আসছি। মানহীন গল্প ও অল্প বাজেট দিয়ে এফডিসির চার দেয়াল, চারপাশের বনজঙ্গল কিংবা কক্সবাজার ও এর আশেপাশের কিছু জায়গাতে ছবির শুটিং করে এখন আর দর্শকদের মন জয় করা সম্ভব না। আন্তর্জাতিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্প অনেকদূর এগিয়ে গেছে। পিছিয়ে আছি শুধু আমরা। শুরু থেকে আমি কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের কথা চিন্তা করে ছবি বানাই। সেক্ষেত্রে গল্প, লোকেশন, নির্মাতা, শিল্পী থেকে শুরু করে কোনো কিছুতেই আপস করি না। যেটা অনন্ত-বর্ষ জুটি তাদের ছবিগুলোতে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের ছবিগুলোতে পৃথিবীর অনেক বড় বড় নির্মাতাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ছবিতে অনন্ত ও বর্ষা অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর।
আপনার নতুন ছবি ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’র কাজের কি অবস্থা?
ছবিটির অর্ধেকেরও বেশি কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছি। ১৪ টি অ্যাকশন দৃশ্যের মধ্যে ১১ টিরই কাজ শেষ। অভিনয় অংশেরও অনেক কাজ এগিয়ে গেছে। সামনে লন্ডন ও থাইল্যান্ডে গানের শুটিং শুরু করব।
এ ছবির গল্প কি নিয়ে?
শুধু এটুকুই বলব, ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’ ছবির যে গল্প নিয়ে আমরা কাজ করছি বাংলাদেশে এর আগে কেউ এ ধরনের গল্পের ছবি বানানোর সাহসও করেনি। সত্যি কথা বলতে, আমি সব সময় বড় বড় চিন্তা করে বাস্তবের সঙ্গে মিল রেখে ছবি বানাই। সমাজের মানুষের উপকারে আসে এমন ভাবনা নিয়ে সব সময় ছবির কাজ করতে চাই।
