যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালাতে সশস্ত্র বাহিনীকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। গতকাল পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে ভয়াবহ হামলার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে পারমাণবিক হামলা চালানোর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর ফলে বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের মুখে পড়ছে। টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে কোরিয়া উপদ্বীপ সংলগ্ন অঞ্চলে। সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-তে দেয়া এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী বলেছে যুদ্ধের সময় খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছে। কোরিয়ান পিপল আর্মির জেনারেল স্টাফের মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে গতকাল বলা হয়েছিল আজ অথবা আগামীকালের মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে। এদিকে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমা হামলার হুমকির প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রও সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর অংশ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। কোরীয় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণ দক্ষিণে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুয়াম’ সামরিক ঘাঁটিতেও ইন্টারসেপ্টর বিমান (শত্রুদের হামলাকারী বিমান আটকে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান) পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পেন্টাগন। এদিকে পেন্টাগন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সামরিক ঘাঁটি গুয়ামকে রক্ষায় সেখানে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র-ধ্বংসকারী অস্ত্র ‘থাড’ পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া সেখানে বোমারু বিমান, স্টিল্থ বিমান এবং জাহাজও পাঠানো হয়েছে। বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, পিয়ংইয়ংয়ের বিতর্কিত হুমকি ও এর সামরিক দক্ষতা যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ এ অঞ্চলের মার্কিন মিত্রদের জন্য ‘প্রধান ও স্পষ্টত বিপজ্জনক’ হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, তাদের (উত্তর কোরিয়া) এখন পারমাণবিক সক্ষমতা রয়েছে, রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতাও। আমরা এসব হুমকি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি, তারা আমাদের যে ধরনের হুমকি দিচ্ছে সেসব হুমকি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে নেয়া উচিত। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া কখন তাদের চূড়ান্ত হামলা শুরু করে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের শক্তি প্রদর্শন করে তা আমরা খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে আক্রান্ত হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ারও হুমকি দিয়েছে সিউল। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নহাপ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া মধ্যম পাল্লার মসুদান ক্ষেপনাস্ত্রকে পূর্ব উপকূলে সরিয়ে নিয়েছে। এ ক্ষেপণাস্ত্রের আওতা ৩০০০ কিলোমিটার বা এর চেয়ে বেশি বলে ধারণা করা হয়। ফলে এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সমগ্র ভূখণ্ড, জাপান এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুয়ামের মার্কিন সীমানাতেও হামলা করা সম্ভব। উত্তর কোরিয়া অবশ্য এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়নি বলে বেশির ভাগ স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন। বুধবার উত্তর কোরিয়ার ১০ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত যৌথভাবে নির্মিত ‘কেইসং শিল্প এলাকা’য় দক্ষিণ কোরীয় শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করে দেয় উত্তর কোরিয়া। এ সিদ্ধান্তের ফলে পিয়ংইয়ং ও সিউলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হয়। উত্তর কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞা অনুসারে সিউল সমন্বয় মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমিকরা পার্কটি ত্যাগ করতে পারবেন, কিন্তু কেউ আর অনুপ্রবেশ করতে পারবেন না। তবে সিদ্ধান্তটি কত দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।
