উইকেটে সিম বোলাররা সহায়তা পাবে। তাই দুই দলই সিম বোলারদের আধিক্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু কী দেখা গেল। এক স্পিনার রঙ্গনা হেরাথই ডুবিয়ে দিল বাংলাদেশকে। ৫ উইকেট নেয়া এ স্পিনারের বোলিং ভেল্কির সামনে দাঁড়াতেই পারল না ব্যাটসম্যানরা। আর তাই দিন শেষ হওয়ার আগেই প্রথম ইনিংসে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যেতে হলো। এরপর শ্রীলঙ্কাও এক উইকেট হারিয়ে ১৮ রান করায় এখনও বাংলাদেশ প্রথম দিনে এগিয়ে আছে ২২২ রানে।
ম্যাচের শুরুটিই হয়েছিল দুর্ভাগ্যভাবে। টস হেরে বাংলাদেশ দলকে ব্যাট করতে হলো। সিম উইকেটে আগে ব্যাট করা মানেই ভয়। বাংলাদেশ দল সেই সুবিধা নিতে তিন পেসার নিয়ে খেলছে। নয় বছর পর এ জন্য বামহাতি কোন স্পেশালিস্ট স্পিনারকেও দলে রাখেনি। কিন্তু টস ভাগ্য শ্রীলঙ্কানদের দিকেই গেল এবং সেই ভাগ্য শ্রীলঙ্কাকে সুবিধাও এনে দিল।
তামিম ব্যাট হাতে আবার টেস্টে নামলেন। কিন্তু নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারলেন না। ১০ রান যোগ করতেই দ্রুত আউট হয়ে গেলেন। তার কাছ থেকে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের চাওয়া ছিল শুরুটা যেন ভালভাবে করে দেন। কিন্তু তামিম তা করতে পারলেন না।
আউটফিল্ডে ঘাস ভরা। তুলনামূলক বড় ঘাস। যেজন্য বল বাউন্ডারি পর্যন্ত গেলেও বাউন্ডারি হয় না। তাই বাংলাদেশকে অনেক কষ্টে আশরাফুলের কল্যাণে ১৭.৫ ওভারে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি পেতে হলো। কিন্তু লাভ কী হলো। দলের ভরাডুবি তার মাধ্যমেই শুরু হলো। টেস্ট ক্রিকেটে রান আউট মানেই দলের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এখানে রান করার এত তাড়া থাকে না। কিন্তু আশরাফুল সেই তাড়া অনুভব করলেন। এবং ১৬ রান করে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথও ধরলেন। তখন দলের স্কোরবোর্ডে রান যুক্ত ৫১ রান।
প্রথম টেস্টে আশরাফুলই দলের ভিত মজবুত করেছিলেন। শতক করে। এরপর একেক করে বড় ইনিংসের দেখা পাওয়া গেছে। এবার আশরাফুল এমন খেলেছেন যেন দলের ভিতই নাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই নাড়িয়ে দেয়া ভিতে মমিনুল ও জহুরুল মিলে কিছুটা এগিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। এরাঙ্গার বলে ৩৩ রান করে জহুরুল যখন মাঠ থেকে সাজঘরে ফিরছেন তখন যেন বাংলাদেশের দুর্বিষহ চেহারাই চোখে ভাসছে।
দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দলকে ডুবিয়েই দিয়েছেন। দুজনই এদিন ব্যর্থ হয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ ৮ ও মুশফিক ৭ রান করে আউট হয়েছেন। বাংলাদেশের ১৫২ রানেই ৫ উইকেট পড়ে যায়। দল তখন আড়াই শ’ রান করতে পারবে কি না এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। শেষপর্যন্ত হয়েছেও তাই।
তবে বাংলাদেশকে মমিনুল হক অনেক দিয়েছেন। অভিষেক টেস্টেও অর্ধশতক করেছেন। আবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। সবার আশা ছিল মমিনুলের সঙ্গে নাসির যুক্ত হলে ভাল হবে। এবং দুজন মিলে দলকে আরও অনেকদূর নিয়ে যাবেন। মমিনুল-নাসির ঠিকই এক হলেন। জুটি গড়লেন। কিন্তু দল বেশিদূর গেল না।
৬৪ রানে আউট হওয়ার আগে মমিনুল দলকে ১৬৩ রানে রেখে গেছেন। সেখান থেকে নাসির হোসেন ৪৮ ও সোহাগ গাজী ৩২ রান করে দলকে শেষপর্যন্ত ২৪০ রানের কাছে নিয়ে গেছেন। ২৪০ রানে নাসির আউট হতেই বাংলাদেশের ইনিংসও গুটিয়ে যায়।
দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৪ ওভার আগে বাংলাদেশ ৮৩.৩ ওভারে অলআউট হয়। এরপর শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ব্যাট করতে নামেন। তারাও শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায়। ৭ রানেই দিলশানের মতো ওপেনার রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। এখন ব্যাটিংয়ে আছেন ১২ রান করা কারুনারতেœ ও ৩ রান করা সাঙ্গাকারা। আজ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে এই দুজন ব্যাট হাতে নামবেন।
টেস্টে বাংলাদেশ ২৪০ রানে দ্রুতই অলআউট হয়ে গেছে। গল টেস্টের সঙ্গে কোন মানানসই ইনিংস নেই। শুধু মমিনুল হক ছাড়া। এই টেস্ট তাই কোন দিকে গড়াচ্ছে? এ নিয়েই সবাই ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। তবে সিম উইকেটে যে হেরাথ মমিনুল, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, নাসির ও সোহাগ গাজীর উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কান প্রধান বোলারের ভূমিকা পালন করেছেন সেটিই সবার নজর করেছে। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আবারও সেই পুরনো রীতিতে এগিয়ে চলেছে। এক ম্যাচ ভাল খেলে আরেক ম্যাচেই খারাপ করে। তবে এখনও অনেক সময় বাকি। দুদিন পেসারদের খানিকটা সহায়তা থাকলেও তৃতীয় দিন থেকেই স্পিন ধরবে। সেই স্পিন ধরার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের লাভ হচ্ছে না। স্পেশালিস্ট কোন বামহাতি স্পিনারই দলে নেই। আর তিন পেসার নিয়ে যে নেমেছে দল উইকেটের সহযোগিতা না পেলে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা আবারও পাহাড়সম রান করবে। যেটিতে এবার চাপা পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রথম ইনিংসেই যে হেরাথ দেখিয়েছেন চমক। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হতে নিশ্চয়ই তৃতীয় দিন লাগবে। তাহলে হেরাথ আরও চৌকুস বোলিং নৈপুণ্য দেখাতে পারবেন।
এখন বাংলাদেশ বোলারদের ওপরই সব। কুলাসেকারা উইকেট থেকে সহায়তা নিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন। রবিউল আশা দেখাচ্ছেন। তার বোলিংয়ে দিলশান আউট হয়েছে। এবং বোঝা যাচ্ছে চাইলে রুবেল, রাজুও এ উইকেট থেকে সহায়তা নিতে পারে। যদি না নেয়া যায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের যে স্পিন মজবুত নেই। আর সব চাপ তখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ওপর পড়ে যাবে। চাপে ব্যাটসম্যানরা ভাল খেলে। কিন্তু সেই চাপ না আবার উল্টো নিজেদের ঘাড়েই চেপে বসে। তাহলেই সব শেষ হয়ে যাবে। ২৪০ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশ খুব যে ভাল করবে সেই আভাস দিচ্ছে না। এখন ২২২ রানে যে এগিয়ে রয়েছে তা পুঁজি করেই এগিয়ে চলতে হবে। উইকেটের সহায়তা নিয়ে শ্রীলঙ্কানদেরও দ্রুতই বেঁধে ফেলতে হবে। তা না হলে গল টেস্টের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে না। যেটি বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য।