রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে শুরু হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের মেলা ‘সিটিআইটি ২০১৩’। ‘সামাজিক ও গণযোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম কম্পিউটার’ স্লোগানে ১০ দিনব্যাপী এ মেলা চলবে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত। লিখেছেন আল আমীন হাসান

দেশের প্রথম বিশেষায়িত কম্পিউটার বাজার ‘বিসিএস কম্পিউটার সিটি’। বছরজুড়েই দর্শক-ক্রেতার আগমনে জমজমাট থাকে কম্পিউটার পণ্যসামগ্রীর এ বিক্রয়কেন্দ্র। তবে বাড়তি নানা আয়োজন নিয়ে প্রতি বছর মেলা করে থাকে এ মার্কেট কমিটি। কমিটির আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের এ মিলনমেলা। মেলা উপলক্ষে নতুন করে সেজেছে সিটির স্থায়ী ১৬০টি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। এখানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক ডাটা কমিউনিকেশন, মাল্টিমিডিয়া আইসিটি শিক্ষা উপকরণ, ল্যাপটপ, পামটপ এবং ডিজিটাল জীবনধারা ভিত্তিক প্রযুক্তি ও পণ্যের সমাহার।
নানা আয়োজন :মেলা উপলক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বিকিকিনি ছাড়াও বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে থাকছে সেমিনার, আলোচনা সভা, গুণীজন সম্মাননা, সেলিব্রেটি শো, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ, রক্তদান কর্মসূচি। এছাড়া শিশু এবং তরুণদের মেলা নিয়ে আগ্রহী করে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। এসব প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে শিশু চিত্রাঙ্কন, গেমিং, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, বিতর্ক এবং কুইজ। মেলা চলাকালে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে নানা রকম অনুষ্ঠান। বরেণ্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা এসব আয়োজনে অংশ নেবেন। প্রতিদিন মেলায় স্থাপিত নিজস্ব মঞ্চে এসব আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন থাকছে তথ্যপ্রযুক্তি সাধারণ মানুষ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন প্রযুক্তির কলাকৌশল কম্পিউটার সেবা পেঁৗছে দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন। আয়োজকরা দাবি করেছেন সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গণ এবার ইন্টারনেটের আওতাভুক্ত আনা হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বিনামূল্যে এখান থেকে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মেলা ঘুরে তার বাস্তবতা পাওয়া যায়নি। তথ্যপ্রযুক্তির নানা ধরনের উদ্যোগকে উপস্থাপন করতে ‘নলেজ ম্যানেজমেন্ট জোন’ চালু করা হয়েছে। এখানে
বিশ্বখ্যাত সব আইটি ব্যক্তিত্বকে উপস্থাপনসহ কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং কলাকৌশল তুলে ধরা হচ্ছে। গুণীজন সম্মাননা পর্বে মেলায় প্রায় প্রতিদিনই দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনের পথিকৃতদের অবদান তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হচ্ছে। শৌখিন চিত্রগ্রাহকদের জন্য স্যামসাংয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিজিটাল ফটো প্রতিযোগিতা ‘সিটি ফেয়ার ২০১৩’। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে নিজের তোলা যে কোনো ছবি মেলা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। একটি অভিজ্ঞ বিচারক প্যানেল সর্বোত্তম ছবিগুলো নির্বাচন করবে, যেগুলো পরে স্যামসাংয়ের ফটো গ্যালারিতে প্রদর্শিত হবে। আর বিজয়ীদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় সব পুরস্কার। বয়স ভিত্তিক দুটি শাখায় প্রতিযোগিতাটি হবে। বয়স ১০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে যে কোনো শিক্ষার্থী যে কোনো বিষয়ের ছবি জমা দিতে পারবে। তবে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। বয়স ২৫ বছরের ঊধর্ে্ব হলে ‘দৈনন্দিন জীবন’ বিষয়ে ছবি জমা দিতে হবে।

ছাড় ও উপহার : মেলায় ডেস্কটপ, ল্যাপটপসহ প্রায় সব ধরনের কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখানে সুলভ মূল্যে ডেস্কটপ পিসির পাশাপাশি ল্যাপটপও পাওয়া যাচ্ছে। গেল্গাবাল ব্র্যান্ড মেলায় আসুসের বিভিন্ন মডেলের ল্যাপটপ ও ই-পিসি নেটবুক বিক্রি করছে। ২২ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এসব ল্যাপটপ। মেলা থেকে আসুস ল্যাপটপ ক্রয়ে ক্রেতারা স্ক্র্যাচ কার্ডের মাধ্যমে নোটবুক, ফোন, মাউস, পেনড্রাইভসহ বিভিন্ন উপহার পাবেন। ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ক্রয়ে থাকছে সুদৃশ্য ৮ জিবি পেনড্রাইভ। এছাড়া আসুসের অন্যান্য পণ্য, ব্রাদার প্রিন্টার, এলজি মনিটর, এফোরটেক, এডেটা পণ্যে বিশেষ ছাড়। মেলায় এইচপি ল্যাপটপের সঙ্গে মডেল ভেদে দেওয়া হচ্ছে মাউস ও টিশার্ট। তোশিবা ল্যাপটপের সঙ্গে থাকছে এক হাজার টাকা গিফট ভাউচার। কম্পিউটার সোর্স মেলায় এনেছে বেশ কিছু নতুন পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে প্রোলিংক হ্যান্ডি রাউটার, অ্যান্টেক, করসায়ার এবং রেজার ব্র্যান্ডের ফুল গেমিং ডিভাইসের পাশাপাশি লজিটেক ব্র্যান্ডের তারহীন প্রযুক্তির কিবোর্ড, মাউস। মেলায় তাদের প্রতিটি ডিভাইসে রয়েছে নগদ মূল্য ছাড়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা। তবে স্কুল শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পাবে। প্রতিবন্ধীরাও বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার পাবেন। প্রতিদিন প্রবেশ টিকিটের ওপর র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে দেওয়া হবে ল্যাপটপসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার। এছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো দর্শনার্থীদের টিকিট ক্রয়ের সময়ও আকর্ষণীয় গিফট হ্যাম্পারের দেওয়া হচ্ছে। তবে টাকা খরচ করে মেলায় প্রবেশ করতে হওয়ায় অনেক দর্শনীর্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বিসিএস কম্পিউটার সিটি মার্কেটে তারা সবসময় বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে মেলা উপলক্ষে কেন টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এতে কি আগ্রহীদের উল্টো মেলায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে না। এমন প্রশ্নের জবাবে মেলার আহ্বায়ক এএনএম কামরুজ্জামান বলেন, মেলায় ক্রেতাদের জন্য পুরস্কারসহ নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যৎসামান্য প্রবেশমূল্য আগ্রহীদের নিরুৎসাহিত করবে না।
