তিন বছর আগে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) প্রতি কনটেইনার ওঠানো-নামানো, সংরক্ষণ ও সরবরাহসহ সমন্বিত কাজের সর্বনিম্ন দর ছিল ১৫৫ টাকা। বন্দরের মূল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লোকবল দিয়ে এ দরে এখনো চলছে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সমন্বিত কাজ। তবে নতুন দরপত্রে এখন সর্বনিম্ন দর পড়েছে ৪৯৫ টাকা!
২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে গত তিন বছরে মোট নয় লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সর্বনিম্ন মোট দর ছিল ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এবার ৪৯৫ টাকা হিসাবে আগামী তিন বছরে ১০ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সর্বনিম্ন দর পড়েছে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে ১০ লাখ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সমন্বিত কাজে চট্টগ্রাম বন্দরের বাড়তি ব্যয় হবে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এবারের দরপত্রে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়। জানতে চাইলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক বন্দরের বোর্ড সদস্য নজরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, গতবার প্রতি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর দর ছিল অস্বাভাবিক কম। এবার দরপত্রে টার্মিনাল পরিচালনায় নতুন কিছু বাড়তি কাজ যোগ হয়েছে। এর পরও বন্দরের প্রাক্কলিত দরের কাছাকাছি থাকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে টার্মিনাল পরিচালনার কাজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করলেই নতুন দরে কাজ শুরু হবে। আর তা খুব শিগগির হতে পারে।
দরপত্র অনুযায়ী, টার্মিনালটি পরিচালনার কাজে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৫০ কোটি টাকার চারটি অত্যাধুনিক গ্যান্ট্রি ক্রেন, ১১টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং আটটি স্ট্রাডল ক্যারিয়ার নির্বাচিত দরদাতাকে সরবরাহ করবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের এসব যন্ত্রপাতির সঙ্গে নিজেদের ৫০টি ট্রাক্টর-ট্রেইলর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন করবে। অবশ্য এবার দরপত্রে বাড়তি ছয়টি এমটি হ্যান্ডলার যন্ত্র সরবরাহ করে কনটেইনার পরিচালনার কার্যক্রম করবে নির্বাচিত দরদাতা। দিন-রাত তিন পালায় এসব যন্ত্র চালাবে প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত ন্যূনতম ১৯৬ জন অপারেটর।
জানতে চাইলে সর্বনিম্ন দরদাতা সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন দরপত্রে এক ইয়ার্ড থেকে অন্য ইয়ার্ডে পণ্যভর্তি কনটেইনার স্থানান্তর, খালি কনটেইনার অপসারণে নিজস্ব যন্ত্র ব্যবহার এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বাস্তবায়নের মতো তিন ধরনের বাড়তি কাজ যোগ হয়েছে। এ তিনটি আলাদাভাবে দরপত্রের মাধ্যমে দেওয়া হলে বন্দরের ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হতো বলে তাঁর দাবি।
নিয়মানুযায়ী, নির্বাচিত দরদাতা প্রতি কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য বন্দর থেকে এ টাকা আদায় করবে। পাশাপাশি প্রতি কনটেইনার ওঠানো-নামানো বাবদ শিপিং এজেন্ট থেকেও প্রতিষ্ঠানটি আদায় করবে ২০০ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাবদ প্রতি ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারে গড়ে প্রায় ৭৫ মার্কিন ডলার পেয়ে থাকে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে।