প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অর্থ, জ্ঞান ও প্রযুক্তি সহায়তা দিতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রূপসী বাংলা হোটেলে পপুলেশন ডাইনামিকস বিষয়ক দুই দিনব্যাপী গ্লোবাল লিডারশিপ মিটিং উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০১৫ সাল পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা বিষয়ে বৈশ্বিক আলোচনায় বিবেচনার জন্য তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। বাসস।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও সুইস সরকার যৌথভাবে দুই দিনের এ বৈঠক আয়োজন করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের নির্বাহী পরিচালক ড. বাবাতুন্দে অসোতিমেহিন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল মার্টিন দাহিনদেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস, বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়কারী প্রফেসর ড. কাজী খলীকুজ্জমান বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম সুপারিশে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে লাখ লাখ যুবক এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রমবর্ধমান যুব শ্রেণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বিশ্বকে এসব যুব/যুব মহিলাদের বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সুতরাং শিক্ষার গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে বাজারের চাহিদা অনুসারে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। এসব যুব/যুব মহিলাদের এমন জ্ঞান ও দক্ষতা বিষয়ে পারদর্শী করতে হবে, যা ভৌগোলিক সীমারেখার বেড়াজালে সীমাবদ্ধ না থাকে।

দ্বিতীয় সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী মানুষের বিচরণকে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা, অনিবার্য এবং পারস্পরিক কল্যাণকর হিসেবে বিবেচনার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একে উৎপাদনশীল প্রচেষ্টা হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানুষের অধিকতর বিচরণ উৎস ও গন্তব্য উভয় দেশের জন্যই কল্যাণকর। বিশেষ করে অনেক উন্নত দেশের জনসংখ্যার গতিধারা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এটা এখন বাস্তবতা। তিনি বলেন, এ ধরনের বিচরণশীলতা টেকসই অর্থনৈতিক কর্মকা-ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটা নিশ্চিত করতে হলে একজন অভিবাসীকে উন্নয়ন এজেন্ট হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় সুপারিশে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতাকে মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সব সময়ই উদ্ভাবনমূলক অংশীদারিত্ব বিষয়ে উদার নীতি গ্রহণ করে আসছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা আমাদের সম্পদের এবং সামর্থ্যের সবটুকু নিয়োজিত করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়ন অন্বেষায় পরিবেশের পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সংকট নাগরিক ও রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। অনেক দীর্ঘমেয়াদি ধারণা ও উন্নয়ন কৌশলকে আজ সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে বিশ্ব জনসংখ্যা যখন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন বিভিন্ন সমাজ ও দেশ ভিন্নমাত্রার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভৌগোলিক সীমানার অভ্যন্তরে এবং বাইরে আমরা মানব ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব বিচরণশীলতা লক্ষ্য করছি। তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডায় অনেকটা আগ্রহের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে নতুন নতুন উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
গ্লোবাল লিডারশিপ অন পপুলেশন ডায়নামিকস বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশ দুই দিনের এ বৈঠক আয়োজন করে। ২০১৫ পরবর্তী ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এজেন্ডার রূপরেখা তৈরিতে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ধারাবাহিক যে ৫০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এটি তার মধ্যে প্রথম।
দুই দিনের এ বৈঠকে ৫১টি দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে বৈঠকটি জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতা, বিশেষ করে কিছু কিছু দেশের ফার্টিলিটি হরাসসহ উন্নত দেশের বয়স্ক জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যৎ কৌশল প্রণয়নে বিশ্ব উদ্যোগে ভূমিকা রাখবে।
