ঢাকা: ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও সহিংসতায়’ গভীর উদ্বেগ জানিয়ে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা- অধিকার মঙ্গলবার বলেছে, ‘সরকারকে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই হত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে’। অধিকার একইসঙ্গে জোর দিয়ে বলেছে যে, ‘সরকারকে অবিলম্বে সকল পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই চলমান সংকটের সমাধান করতে হবে’।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর ও উপসানালয় জ্বালিয়ে দেয়া’র ব্যাপারে ‘চরম ক্ষোভ’ জানিয়ে অধিকার আরো দাবি করছে যে, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই হত্যার দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে; নতুবা এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেশকে এক কঠিন পরিনতির দিকে নিয়ে যাবে, যার সমস্ত দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে’। দেশের ‘অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপ্রিয় জনগণ’কে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সহিংসতা দমনের অজুহাতে ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ থেকে মার্চের ০৪ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্ততপক্ষে ৯৮ জনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে; রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। এই সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন এবং ৫ জন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই খবর প্রকাশ করা পর্যন্ত সময়ে আরো মৃত্যুর খবর আসছে।

এসব ঘটনায় ‘শোকাহত ও এই সহিংস পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন’ হবার কথা জানিয়ে এই প্রখ্যাত মানবাধিকার সংস্থাটি বিকেলে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশব্যাপী এক চরম নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে’।
সভাপতি ড. সি আর আবরার ও সম্পাদক আদিলুর রহমান খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশেষভাবে উৎকণ্ঠিত যে, এই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর ও উপসানালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিকার সরকার ও সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতি অবিলম্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপ্রিয় জনগণ ও মানবাধিকার কর্মীদের এইসব দুর্বৃত্তদের আক্রমণ থেকে হিন্দু প্রতিবেশীদের রক্ষার জন্য তাঁদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ জানাচ্ছে’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবেশ শুরু হবার পর কয়েকজন ব্লগারের ব্লগে আল্লাহ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে কটুক্তি, এই ঘটনার জের ধরে সহিংসতা ও এই সময় পুলিশের নির্বিচারে চালানো গুলিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে নারী ও শিশুরাও হতাহতের শিকার হয়েছেন।
২৮ শে ফেব্রুয়ারী সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করে। এদিন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর জামায়াতে ইসলামী সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে। এতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পুলিশ ও অন্যান্য আাইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করে। এমন হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মানুষ থানা, স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারী স্থাপনা ঘেরাও ও হামলা করে।
সংস্থাটি বলছে, ‘অধিকার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায় যে, গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের অনেকেই ছিলেন সাধারণ ছাত্র-কৃষক-জনতা এবং যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলেও পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিক্ষোভরত নিরস্ত্র জনগণের দিকে অস্ত্র তাক করে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে’।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অধিকার এই হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণহানি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অধিকার সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে যে, অবিলম্বে নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং বিদ্যমান সহিংস পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষ্যে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে রাজনৈতিক দল-মত নির্বিশেষে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এই সংকটের মোকাবেলা করতে হবে’।
দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানজনক স্বীকৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে অধিকার। দেশজুড়ে ‘মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মী’ রয়েছে সংস্থাটির। নিকট অতীতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর হত্যাকাণ্ড প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরতে একক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যৌথভাবে নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছে অধিকার।
