শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি ॥ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেরপুরের শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা খারামোরা গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সোমেশ্বরী নদী থেকে শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালুদস্যুরা। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী খারামোরা গ্রামের ফসলি জমি, মৎস্য খামার, বনভূমি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ আর শত শত ঘরবাড়ি, অন্যদিকে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে আতঙ্কিত নদী তীরবর্তী অধিবাসীরা।
শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা খারামোরা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ছালাম, লাল চান, মহর আলী, নুর ইসলাম, বাদশা মিয়া, মতি মিয়া, ফেক্কু মিয়া, রুস্তম আলী, আমজাদ হোসেন, ময়দান আলী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমানা ঘেঁষা একই গ্রামের হাবেজ আলী, আব্দুল হালিম ও খোকা মিয়াসহ অনেকে জানান, ভারতের পোড়াকাশিয়া হতে বয়ে আসা সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী খারামোরা গ্রাম। ওই নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা খারামোরা গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। এমনকি গ্রামটি ভারতের পোড়াকাশিয়া এলাকার সীমানা ঘেঁষা। সম্প্রতি স্থানীয় জুবাইদ, আমিন আলী ও এরশাদ আলীসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র ওই নদী থেকে ১০/১২টি শ্যালো মেশিনের ড্রেজার দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে আসছে। ওইসব বালু বহন করছে মাহিন্দ্র ও শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে। এতে ভাঙছে সোমেশ্বরী নদীর পাড়।
ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শতাধিক একর ফসলি জমি, বনভূমি ও একটি পুরাতন কবরস্থানসহ কয়েকটি বসতবাড়ি। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ। নদীর তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে স্থানীয় কয়েকটি মৎস্য খামারের লাখ লাখ টাকার মাছ। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে অচিরেই নদী গর্ভে বিলীন হবে ওই গ্রামের আরও শতশত বসত ঘরবাড়িসহ সহাস্রাধিক একর আবাদি জমি। খারামোরা গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্য খামার মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি বিদেশ ছিলাম। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে বাড়ি এসে মৎস্য খামার করি। একটি চক্র সোমেশ্বরী নদী থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে শ্যালো মেশিনের ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে আমার মৎস্য খামারের বাঁধ ভেঙে কয়েক লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এখন আমার ফসল ও বাগানসহ ঘরবাড়িও হুমকির মুখে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ ময়দান আলী বলেন, আমার জন্ম এইহানেই। এইহানে আমার বাপ দাদার কবরস্থান ছিল। বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাইঙা কবরস্থানটাও অহন নদী অইছে। অহন আমার পুকুরের পাড় ভাঙছে। মেলা ক্ষতি অইতাছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জহুরুল হক বলেন, যারা বালু তুলে তাদের বিরুদ্ধে এই গ্রামের মানুষ কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মারপিটের হুমকি দেয়। অবৈধভাবে সোমেশ্বরী নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি তুলেছেন খারামোরা গ্রামের এই জনপ্রতিনিধিসহ ওই গ্রামবাসী।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মনজুর আহসান বলেন, এলাকাটি শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমানা। এ জন্য অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হয়। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।