ads

মঙ্গলবার , ২০ নভেম্বর ২০১৮ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

রেজা কিবরিয়া ও বিস্ময়!

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ২০, ২০১৮ ৩:০০ অপরাহ্ণ

শ্যামলবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের ‘৯৬ শাসনামলের অর্থমন্ত্রী শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল (এএমএস) কিবরিয়ার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ওই খবর যতটা না কৌতূহলোদ্দীপক তারচেয়ে বেশি কৌতূহলের তিনি আওয়ামী লীগের আদর্শিক ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে বিএনপির প্রতীকে নির্বাচনে করলেও তিনি বিএনপিতে যোগ দেননি, যোগ দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে; এবং গণফোরাম জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কারণে ড. কামালের মত ড. রেজা কিবরিয়ারও প্রতীকের নাম ‘ধানের শীষ’।

Shamol Bangla Ads

রেজা কিবরিয়া তার বাবা শাহ কিবরিয়ার মতই জাতিসংঘে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি কম্বোডিয়ায় কর্মরত। সেখান থেকেই সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন এবং দেশে ফিরে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। যোগদানের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১০ বছরের শাসনকাল তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
পিতা হত্যার বিচার নিয়ে তার বক্তব্য, “আমার বাবা আওয়ামী লীগ করতেন। আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। ফলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়ার কথা সত্য নয়। তাছাড়া এত বছরেও আমার বাবা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি। বিএনপি করেনি, ১/১১- এর মেরুদণ্ডহীন সরকার করেনি। যে আওয়ামী লীগের জন্য বাবা জীবন দিয়েছেন সেই আওয়ামী লীগও দশ বছরে আমার বাবা হত্যার বিচারে কিছুই করেনি, তারপরও তাদের উপর আমি সন্তুষ্ট থাকবো- এটি তারা ভাবে কী করে? ফলে আমার ক্ষোভ থাকতেই পারে। যারা ১০ বছরে একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করতে পারে না, তাদের তো সরকারে থাকাই উচিত না।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর রেজা কিবরিয়ার ক্ষোভও পিতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার হত্যার সঠিক তদন্ত না হওয়ার। কিন্তু ২০১৪ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটে যখন সিলেটের বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জের মেয়র গোলাম কিবরিয়া (জি কে) গউছসহ বিএনপি নেতাদের নাম নতুন করে ওঠে আসে তখন তিনি জানিয়েছিলেন এবার আর তারা চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন না। [বিডিনিউজ ডিসেম্বর ২১, ২০১৪]। ওই চার্জশিটের আগে একাধিক বার তারা নারাজি দিয়েছিলেন।

Shamol Bangla Ads

এর আগে ২৪ নভেম্বর ২০১৪ সালে শাহ কিবরিয়ার স্ত্রী চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলছিলেন, “আমি দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম আমার স্বামীর প্রকৃত হত্যাকারী এবং হত্যার মদদদাতা, সহায়তাকারীদের প্রকাশ্যে আদালতে বিচার হউক। আজ ১০ বছর পর নতুন একটি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, যাতে কয়েকটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম রয়েছে। ১০ বছর পর সম্পূর্ণ না হলেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নতুন চার্জশিট দেখে যেতে পারলাম। কিন্তু আমার ভাসুর তার ভাই শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং তার ছেলে শাহ মঞ্জুর হুদার হত্যার বিচার কিংবা চার্জশিট কোনটিই দেখে যেতে”। অর্থাৎ তদন্ত প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার পরও একটা সময়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার পরিবার এনিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিল।

এখন রেজা কিবরিয়ার ক্ষোভের বিষয় হচ্ছে এত দীর্ঘ সময়েও কেন বিচার হয়নি। নিহতের পরিবার এনিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ক্ষোভের বিষয় উপস্থাপন করতে পারে, এবং যথাযথ সেই ক্ষোভ। তবে এক্ষেত্রে বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। কারণ শাহ কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিস্কারভাবে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। সারাজীবন রাজনীতির বাইরে থাকা শাহ কিবরিয়া যখন খুন হয়েছিলেন তখন তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। উপরন্তু তিনি ক্ষমতাসীন বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রীও। টেকনোক্র্যাট কোটায় শেখ হাসিনা শাহ কিবরিয়াকে মন্ত্রী করলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিতও হন তিনি।

২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের সভা শেষে ফেরার পথে তাকে লক্ষ্য করে দুইটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়, এরপর ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গ্রেনেড হামলার পর মুমূর্ষু শাহ কিববিয়া হবিগঞ্জের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি; তাকে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর করতে প্রশাসনের কাছে হেলিকপ্টার চাওয়া হলে সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। এটা মূলত এই হত্যাকাণ্ডের সম্পাদনে সরকারি-বেসরকারি-রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততায়, যা সর্বশেষ সম্পূরক চার্জশিটে প্রমাণিত।

শাহ কিবরিয়ার বিচার সম্পাদনে কোনো ধরনের কাজই করেনি তৎকালীন বিএনপি সরকার, কাজ দৃশ্যমান হয়নি ওয়ান-ইলেভেনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের দশ বছরের টানা শাসনামলে বিচারকার্য সম্পন্ন না হলেও এই মামলা বিচারিক পর্যায়ে রয়েছে। বাদী ও নিহতের পরিবারের অনাপত্তি না দেওয়া একটা চার্জশিট হয়েছে এই মামলার। হয়ত কাঙ্ক্ষিত দ্রুততায় বিচারকার্য সম্পাদন হয়নি, কিন্তু এই বিচার থেমে থাকছে না। আশা করা যায় এটাও শেষ হবে। তবে দ্রুতগতিতে বিচার শেষ না হওয়ায় সরকার বিচার করেনি বলে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছা অনুচিত।

ওই প্রসঙ্গে রেজা কিবরিয়া স্মরণ করতে পারেন ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিচারের কথা, বিচারিক আদালতের রায় আসতে সময় লেগেছিল ১৪ বছরের বেশি। সেই হামলার মামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও আক্রান্ত হওয়া একজন। আহত-নিহতদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাদেরকে চেনে-জানে পুরো দেশের লোক। এর বাইরে এমন আরও অনেক মামলার উদাহরণ দেওয়া যায় যেখানে বিচারকার্য সম্পন্ন হতে এর চেয়েও বেশি সময় লেগেছে, লাগছে। সুতরাং স্রেফ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার জন্যে রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে, আওয়ামী লীগকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে অন্য পথ ধরেছেন- এমনটা ভাবা যাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত এমপি- এগুলো শাহ এএমএস কিবরিয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটা অধ্যায়ের পরিচিতি বিশেষ। এরবাইরে তিনি স্বনামে পরিচিত দেশে-বিদেশে। অবসর জীবনে শাহ কিবরিয়া আওয়ামী লীগের হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন বলে তার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী লীগের প্রতি আত্মিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার যে ধারণা ছিল সেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ড. রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে গঠিত রাজনৈতিক জোটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অংশ নিয়ে জামায়াতবান্ধব বিএনপির দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষের’ প্রার্থী হতে চলেছেন। তার এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত ঠিক, কিন্তু যখন এই জোটের লক্ষ্যই আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের তখন বিস্মিত হতে হয়। এই বিস্ময়ে আরও যোগ হয় যখন বিএনপি সরকারের আমলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসে, বিস্ময় আরও বাড়ে যখন অভিযুক্তদের সকলের নামের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক পরিচয়ের যোগ থাকে, বিস্ময় বাড়তেই থাকে যখন তৎকালীন বিএনপি সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিবরিয়ার তাৎক্ষণিক চিকিৎসার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিএনপি তার পিতা হত্যার বিচার করবে এমন বিশ্বাস করছেন তিনি- এ আরও এক বিস্ময়।

রেজা কিবরিয়া বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছেন। এই বিস্ময় যতটা না রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার, তারচেয়ে বেশি নেতা আর জোট বাছাই প্রক্রিয়ার!

error: কপি হবে না!