জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিবর্ষ উদযাপন এবং রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন উপলক্ষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এবার কর্মসংস্থানের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করছে। আর এজন্য আসন্ন বাজেটের আকার-আয়তন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজ নিজ বাজেট প্রস্তুত করে তা বাজেট অনুবিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা চলতি বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রাক্কলিত বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য ঋণের বিপরীতে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারও বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এর বাইরে রেমিট্যান্সের টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যে গৃহীত হতে পারে বিশেষ পলিসি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উল্লেখ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে চলতি বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা, যা নানাবিধ কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কয়েক বছর ধরেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ছাড়া হয়েছে বাংলা বন্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দিল্লী ইকোনমিক সামিট, জাতিসংঘসহ বিশ্বের যেখানে যখনই রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন, একদল ব্যবসায়ী তথা বিনিয়োগকারীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিদেশে সফরকালীন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি বিদেশী চেম্বার সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তবু বাস্তবতা এই যে, সরকারের বহুমুখী আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। দেশীয় বিনিয়োগও হচ্ছে না তেমন। দেশে বিনিয়োগের বাধা তথা অন্তরায় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি বিষয়। ব্যবসায়ের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদের হার। শিল্প ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। পাশাপাশি সহজে ব্যবসা করার সূচক বর্তমানের ১৬৮তম অবস্থান থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০০তম করতে ইচ্ছুক সরকার। দেশে তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসবে, শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি কমে আসবে ঋণ খেলাপীর সংখ্যাও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ মুনাফা বা ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে ইতোমধ্যে। ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। এখন বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ। সর্বোপরি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ সৃষ্টির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তবেই সরকারের দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি উদ্যোগ সফল হবে।