‘বঙ্গবন্ধু হত্যা : ‘ভালো নেই নালিতাবাড়ীর ২ শতাধিক প্রতিরোধ যোদ্ধা’ শিরোনামে ‘সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া’র ২৩ আগস্ট সংখ্যায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। ওই শিরোনামেই বোঝা যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের মর্মকথা। তারপরও পাঠক সমাজসহ দায়িত্বশীল মহলের সু-দৃষ্টি কামনার স্বার্থে প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরাই সমীচীন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে স্ব-পরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের অন্যান্য এলাকার মতো শেরপুরের নালিতাবাড়ীতেও গর্জে উঠেছিল প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সেদিন প্রতিরোধে বেরিয়ে পড়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার ৩৭৫ যুবক। তখন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিডিআর ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ ২২ মাস চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে প্রাণ হারান প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকেই। অনেকের ভাগ্যে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। অবশেষে নানা নির্যাতন ও পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করে তাঁরা ফিরে আসেন। এঁদের মধ্যে আজগর আলী, শফিকুল ইসলাম, জিনাত আলী, গৌরাঙ্গ পাল ১০ বছর করে কারাভোগ করেন। এছাড়া ২ বছর করে কারাভোগ করেন বৈদ্যনাথ কর ও মোফাজ্জল হোসেন। তাদের মধ্যে বেঁচে থাকা ২ শতাধিক প্রতিরোধ যোদ্ধার দুঃখ-দুর্দশাই এখন নিত্যসঙ্গী। এরপরও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানাদিসহ সামাজিকভাবেও তারা আজ অবহেলিত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষায় একাত্তরের দীর্ঘ ৯ মাস জীবন বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদের স্বীকৃতি জুটেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। আজ তারা জাতির ‘শ্রেষ্ঠ সন্তান’ হিসেবেও সমাদৃত। আর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবার শহীদ পরিবার হিসেবেই মূল্যায়িত। আর ওইসময় যে সমস্ত মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তারা বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এতোদিন তাদের আলাদা মূল্যায়ন ছিলো না। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়ে কেবল তাদের সন্তানের ক্ষেত্রে নয়, নাতি-নাতনীদের ক্ষেত্রেও পোষ্য কোটা চালুর ব্যবস্থা করেছেন। আর বীরাঙ্গনাদের তালিকা প্রস্তুতক্রমে তাদেরকেও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মূল্যায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জাতি অত্যন্ত আশান্বিত। কিন্তু ৭৫ এর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে একটি কঠিন সময়ে যারা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেনÑ দীর্ঘ ৪০ বছর পরও তারা আজ কেন অবহেলিত? তাদেরকেও দেখার ও মূল্যায়নের দায়িত্ব নিতে হবে এ সরকারকেই। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে তার সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ২০ হাজার টাকা ও শহীদ পরিবারকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেহেতু আজ রাষ্ট্রের কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেবে নাÑ এটা মোটেই কাম্য নয়। সুতরাং সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা অবহেলিত-পীড়িত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চূড়ান্ত স্বীকৃতিসহ তাদের মূল্যায়নে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেনÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।