ads

মঙ্গলবার , ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

নিপীড়িত মানুষের মুক্তির নেতা শেখ হাসিনা : মতিয়া চৌধুরী

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০ ২:৩৭ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো জন্মদিন পালন করেন না। আমরা তারিখটা খেয়াল রাখি, তার জন্মদিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু জন্মদিন ঘটা করে পালন করেন না। এবার আমরা দলীয়ভাবে তার জন্মদিন পালন করছি সত্য, কিন্তু এটি তার সম্মতি নিয়ে না। আমরা দাবি নিয়ে জন্মদিন পালন করছি। তিনি আমাদের নেত্রী, জাতির পিতার কন্যা, সুতারাং তার প্রতি অন্তরের টান থেকেই জন্মদিন পালন করি। এর আগেরবার আমরা তার জন্মদিন পালন করব বলেছিলাম, কিন্তু তখন তিনি বিদেশে (জাতিসংঘের অধিবেশনে) ছিলেন। বললেন, আমার জন্মদিন আমি পালন করি না। আত্মপ্রচার করতে আমি তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক।
বঙ্গবন্ধু কন্যা একটা কথা প্রায়ই বলেন, তার মা তাকে বলতেন আকাশের দিকে তাকাবে না, মাটির দিকে তাকাবে। তোমার চেয়েও যারা খারাপ অবস্থায় আছে তুমি তাদের কথা ভাবো। তাদের দেখো। ওপরের দিকে তাকাবে না। এটা তিনি সবসময়ই করেন। তার জীবনাচারের মধ্যে এ বিষয়টা আছে। দরিদ্রদের প্রতি তার দরদ অনেক। শুনেছি, তিনি যখন কিশোরী ছিলেন তখন ঘরোয়া পরিবেশে তার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অনাড়ম্বরভাবে পায়েস রান্না করতেন, পরিবারের সবাই মিলে খেতেন। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছড়াই তার বেশির ভাগ জন্মদিন গিয়েছে। শুধু জন্মদিন না, প্রধানমন্ত্রীর বিয়ের সময়েও বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। প্রথম সন্তান ও কন্যার বিয়েতে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেনি। তাই জন্মদিনটা বেশির ভাগই নিরানন্দে কেটেছে তার। সেখানে বর্ণচ্ছটা ছিল না। কিন্তু আন্তরিকতা, স্নেহ, ভালোবাসা ও মমতা ছিল। যারাই ওই সময় তার পাশে ছিল, তার মা বেগম মুজিব হোক, বঙ্গবন্ধু হোক বা ভাই-বোন সব মিলিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে তিনি জন্মদিনটি পালন করেছেন।

Shamol Bangla Ads

বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে পিতার সব গুণ তিনি পেয়েছেন। তার মধ্যে পিতার মতো অদম্য সাহস আছে। কোনো নির্যাতন, চোখরাঙানিতে তিনি ভয় পান না। তিনি বাগাড়ম্বর করেন না। তিনি কাজকে ভালোবাসেন। চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তিনি হেলে যান না, কাঁপেন না বা দ্বিধায় ভোগেন না।
প্রধানমন্ত্রীর প্রায় সব গুণই ভালো লাগে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে তার মানবিক মূল্যবোধ। তিনি সব সময় মানবিক মূল্যবোধ লালন করেন। এর মাধ্যমে মানুষকে কাছে টানেন। বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথ রচনা করেন।
তিনি যখন ইডেনের ভিপি হন সে সময়টায় আমি জেলে ছিলাম। তখন আমাদের ছাত্রজীবন শেষ, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করছি। জেল থেকে বের হয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, নেত্রীকে আলাদাভাবে দেখিনি। শেখ হাসিনাকে আলাদাভাবে দেখলাম ১৯৮১ সালে, যখন তিনি দেশে এলেন। তখন থেকেই তার সঙ্গেই কাজ করেছি। ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে খুব বেশি কাছাকাছি আসা। কারণ ওই সময় তার সঙ্গে কারান্তরীণ অবস্থায় একটা কম্বল বিছিয়ে তিনি, আমি ও সাহারা খাতুন (প্রয়াত সাহারা খাতুন), আরেকটা কম্বল আমাদের মাথায় বালিশ হিসেবে ব্যবহার করেছি।
কারান্তরীণ অবস্থায় আমাদের সারা দিন বসিয়ে রেখে সন্ধ্যার দিকে যে খাবার দিল সেটা ডাল আর রুটি। সেই রুটি এতই বালি মিশানো ছিল যে মুখে দিয়ে দেখি কিচ কিচ করে। তিনি তখন আমাকে বললেন, মতিয়া আপা আসেন আমরা এটাকে ডাল দিয়ে চটকে ফেলি, তাহলে নিচের দিকে বালিগুলো পড়বে। ওপরের দিকে মাড়ের মতো হবে, তখন আমরা চুমুক দিয়ে খাব। যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার বিরল গুণের অধিকারী তিনি। এসব গুণের কারণে তিনি নির্যাতন এবং সমস্ত ষড়যন্ত্রকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছেন। আজকে তিনি এ দেশের মানুষের কাণ্ডারি। মানুষ তাকে অবলম্বন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ঝড়-বৃষ্টি, আঁধার রাতে নৌকার কাণ্ডারি। প্রকৃতিতে আম্পান, আর এদিকে করোনা, আবার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র—সবকিছুকে মোকাবেলা করছেন তিনি দৃঢ়হস্তে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর তার দৃঢ়তা ও প্রতিজ্ঞা সুকঠিন হয়েছে। এ ঘটনায় নেত্রীর বাম কানের পর্দায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনার পর সবার চিকিত্সাসহ সব ব্যবস্থা করে বিদেশে যাওয়ার পর ডাক্তাররা দেখে বলেছিলেন, আপনি যদি ১৫ দিনের মধ্যেও আসতেন তাহলে আমরা এ কানটা রক্ষা করতে পারতাম। এখন তিনি সেই কানে হেয়ারিং অ্যাড দিয়ে শোনেন। তিনি পরিহাসের ছলে বলেন, ‘কেউ যদি আমারে কটু কথা বলে তখন আমি তাড়াতাড়ি সেই হেয়ারিং অ্যাডটা খুলে রাখি, তাতে আমার কানে কিছু পৌঁছে না।’ তিনি সমালোচনাকে সহজভাবে নেন। তিনি প্রতিপক্ষের সমালোচনা মন দিয়ে শোনেন, কিন্তু তাত্ক্ষণিক কারো ওপর ক্ষিপ্ত হওয়া এটা তার স্বভাবে নেই। সংসদে এত সমালোচনা করা হয়, সেগুলোর লক্ষ্যবস্তু কিন্তু তিনি। সেখানে তিনি গলা উঁচিয়ে কথা বলেন না। তিনি যখন দাঁড়ান খুব নরমভাবে কথা বলেন। এটা একজন পরিপক্ব রাজনীতিবিদের গুণ।
তার জীবনাচার খুবই সহজ-সরল। এমন জীবনাচার এখনকার নেতা-নেত্রীর মাঝে তেমন দেখা যায় না। এই তো সেদিন সংসদে ফখরুল ইমাম সাহেব প্রশ্ন করলেন, আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে কী খোঁজেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমি জায়নামাজ খুঁজি, নামাজ পড়ি। তারপর নিজের হাতে বানিয়ে এক কাপ চা খাই। অত্যন্ত সহজ-সরল স্বীকারোক্তি, তৈরি উত্তর না। তিনি তো জানতেন না ফখরুল ইমাম এ ধরনের প্রশ্ন করবেন। যেহেতু এখানে কোনো খাদ নেই, তাই তিনি একেবারে সহজ-সরলভাবে বলে গেলেন তার দিন শুরুর লিপিগুলো। এটা কয়জনে পারবেন? এ কথাগুলোর মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা আছে বলে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না।
একদিকে বঙ্গবন্ধুর মতো পিতা, অন্যদিকে বিশাল পরিবার। আত্মীয়-পরিজন সেই বাড়িতে থাকত। কারণ বঙ্গবন্ধু তখন জেলে জেলে থাকতেন। সেই অবস্থায় বেগম মুজিব তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ, দেবর সবাইকে মানিয়ে এবং আরো আত্মীয়দের নিয়ে সংসার সামলে এবং কারান্তরীণ বঙ্গবন্ধুর সব কাজকে তিনি সমর্থন দিতেন। এসবের মধ্যেই বেগম মুজিব ছেলেমেয়েদের নিজ হাতে মানুষ করেছেন। শেখ কামাল আবাহনী ক্লাব গড়লেন। নামটাও ছিল বাংলা। কোনো স্পোর্টস বা ফেডারেশন না। তরুণ সম্প্রদায়কে খেলাধুলার জন্য আবাহন করলেন। একটা সুস্থ বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, জীবনবোধের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বড় হয়েছেন। আর মেয়ে যখন বড় হয়, তখন মায়ের বন্ধু হয়ে যায় তারা। আমাদের নেত্রী কিন্তু মায়ের বন্ধুর জায়গাটাও নিয়েছেন। বেগম মুজিব তার সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো কন্যার সঙ্গে নিঃসংকোচে আলাপ করতেন। বেগম মুজিবের ডাকনাম রেণু। সেই ফুলের রেণুর সুগন্ধই তার সামগ্রিক পরিবার ও বঙ্গবন্ধুর জীবনে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সে সময় এত বড় পরিবার সামলে এলাকার পার্টির কর্মী, ঢাকার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও যুবলীগকে কারান্তরীণ সময়গুলোতে সাহস দিতেন এবং পরামর্শ দিতেন। সে সময় তিনি উচ্চকণ্ঠ না হয়ে শো-অফ না করে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে চলেছেন। সবকিছু চলমান রেখে রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতাকে মানিয়ে চলার দৃঢ় মনোবল বেগম মুজিবের ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই শিক্ষাটা তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়েও তার মনোবল ভেঙে পড়েনি এবং মুখের হাসি কিন্তু মলিন হয়নি। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বাড়িতে পৌঁছে আহত কর্মীদের খোঁজ নিয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু সে সময় তিনি নিজের দিকে তাকাননি, কর্মীদের কথা চিন্তা করেছেন। এখানেই হলো নেতৃত্বের গুণ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি গুণ আমাদের নেত্রী আয়ত্ত করতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সে সময়ের অনেক রাজনীতিবিদ ছিলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক দায়িত্ব নিয়ে, লক্ষ্য স্থির করে কেউ এগোননি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, টুঙ্গিপাড়া, ৩২ নম্বর, ছাত্র রাজনীতি ও পারিবারিক নির্যাস থেকে রাজনৈতিক শিক্ষা পেয়েছেন। সেটাকে তিনি শাণিত করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আজও তিনি নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্যই রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক : আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য।

error: কপি হবে না!