ads

রবিবার , ৪ মার্চ ২০১৮ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

ঝিনাইগাতীতে জাতিতাত্বিক সংখ্যালঘু মিলনমেলা

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
মার্চ ৪, ২০১৮ ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বৈচিত্র-বহুত্বের ঐকতানে, এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’-শ্লোগানে শেরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতিতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু মিলনমেলা। ৩ মার্চ শনিবার ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্র সংলগ্ন গজনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই মিলনমেলায় স্থানীয় গারো, কোচ, বর্মন, হাজং, রাজবংশী সহ নানা জাতিগোষ্ঠির জনগন অংশগ্রহণ করেন। সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদে বসবাসকারী আদিবাসী ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জনগোষ্ঠির নানাভাবে জমিজমা হারানো, জীবন-জীবিকা ওপর নানা ধরনের হুমকি, নিজস্ব ঐতিহ্য রক্ষায় সংকটের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের সাথে যোগসূত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটি ওই মিলনমেলার আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। এছাড়া প্রিয় অতিথি হিসেবে জামালাপুর জেলার জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। দুই জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এলাকার নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
গারো সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জনার্দন বনোয়ারী বলেন, ঝিনাইগাতীর গজনী পাহাড়ে অবকাশ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে স্থানীয় গারো-কোচ সম্প্রদায় জমি হারানো থেকে শুরু করে শব্দ দূষণ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। বনবিভাগের ন্যাশনাল পার্ক নির্মাণের প্রস্তাবে ফের নতুন করে জমিজমা হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পাহাড়ী এলাকা থেকে মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে অনেককে তুলে নেওয়া হয় বলে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন। সাম্প্রতিক কালে পাহাড়ি এলাকায় লোকালয়ে বন্যহাতির তান্ডব বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবন ও ফসলহানি ঘটছে।
কোচ নেতা শিক্ষক যুগল কিশোর কোচ বলেন, বাইরে থেকে অনেক লোক পাহাড়ি এলাকায় ঢুকে আদিবাসীদের জমিজিরাত হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বাঁধা দিতে গেলে উল্টো নানাভাবে আদিবাসীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। আদিবাসী এলাকায় আদিবাসীদের উপযোগী কার্যক্রম বাস্তবায়নের দাবি জানান।
শ্রীবরদী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, হারিয়োকোনা এলাকায় নদী থেকে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা হুমকীর মুখে পড়েছে। যেসব আদিবাসী এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে যায়, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। এজন্য তিনি প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং আদিবাসী সমাজের সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ দাবী করেন।
জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভুমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় এবং শেরপুরের গজনীতে একটি আদিবাসী কালচারাল একাডেমী নির্মাণের দাবী জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ঝিনাইগাতী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকসী শেরপুরের আদিবাসীদের জন্য আয়বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানমুলক প্রকল্প গ্রহণ, কোচিয়া চাষ সম্প্রসারণ, আদিবাসী এলাকায় সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওই এলাকায় বসবাসকারি আদিবাসীদের মতামত গ্রহণ ও তাদের সম্পৃক্তকরণের দাবি জানান।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন ধৈর্য্যের সাথে আদিবাসী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনেন এবং তিনি তার বক্তব্যে নৃ-জাতিস্বত্ত্বার উন্নয়নে সরকার ও স্থানীয়ভাবে গৃহিত নানা পদক্ষেপের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, সরকারের কোন প্রকল্প পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারি কোন জাতিগোষ্ঠির যাতে কোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না করে তিনি সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন। একইসাথে তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্থানীয় জাতিগোষ্ঠির নিজস্ব ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে কিভাবে খাপখাইয়ে আয়বর্ধনমুলক করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি বলেন, নৃ-তাত্ব্কি জনগোষ্ঠির জীবনাচরন, খাবার-দাবার, পোষাক-পরিচ্ছদ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পর্কে বাইরের মানুষের আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহকে নিজেদের উপাজর্নের পূঁজি হিসেবে দেখতে হবে, পার্বত্য জনপদের বান্দরবান-রাঙামাটি এলাকায় যেভাবে পর্যটনকে ওখানকার বসবাসকারিরা নিজেদের আয়ের অংশ করেছে, এখানেও সেভাবে চিন্তার করার সময় এসেছে। মিলনমেলায় উন্থাপিত বিষয়গুলো তিনি আমলে নিয়ে গুরুত্বের সাথে দেখবেন এবং স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের কথা জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু, কাংশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনারুল্লাহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্থানীয় গারো, কোচ ও বর্মন জাতিগোষ্ঠির শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীত পরিবেশন করেন।

error: কপি হবে না!