ads

মঙ্গলবার , ৪ আগস্ট ২০১৫ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনার ১ বছর আজ : এখনও নিখোঁজ ৬১

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
আগস্ট ৪, ২০১৫ ২:০৮ অপরাহ্ণ

Pinak 6শ্যামলবাংলা ডেস্ক : বছর ঘুরলেও পদ্মায় নিখোঁজ পিনাক-৬ আজও রহস্যই থেকে গেল। ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ফিটনেসবিহীন এ লঞ্চটি। টানা ৮ দিন পদ্মার ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা তন্নতন্ন করে খুঁজেও এর হদিস পাওয়া যায়নি। ৪৮ ‘সৌভাগ্যবান’ যাত্রীর লাশ পাওয়া গেলেও আজও ‘নিখোঁজ’ ৬১ জন।
লঞ্চডুবির ৫ দিন পর ১৯ মিটার গভীর পানিতে পিনাকের দৈর্ঘ্যের প্রায় সমান ১৭ মিটার দীর্ঘ ‘রহস্যময়’ ধাতব বস্তুতে উদ্ধারের আশা জেগেছিল। তবে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ধাতব বস্তুর কাছে পেঁৗছাতে পারেননি ডুবুরিরা। তাই রহস্যময় ধাতব বস্তু রহস্য হয়েই থেকে গেল। পিনাক-রহস্যও আর উদ্ঘাটিত হয়নি।
লাশ মেলেনি বলে নিখোঁজদের পরিবার সরকারের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। লঞ্চডুবির মামলারও অগ্রগতি নেই। মামলায় গ্রেফতার লঞ্চের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক ও তার ছেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অন্য আসামিরা আজও গ্রেফতার হয়নি। দুর্ঘটনা রোধে তদন্ত কমিটির ২৫ সুপারিশের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।
যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছিল তাদের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি্লউটিএ) এক লাখ ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়। নিখোঁজদের পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘লাশ না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে মৃত ঘোষণা করা যায় না। আইনি এ বাধার কারণেই সরকারের আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও তাদের আর্থিক সহয়তা দেওয়া যায়নি।’
লঞ্চডুবির মাত্র দু’দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙার রূপার বিয়ে হয়েছিল মিজানুর রহমানের সঙ্গে। ৪ আগস্ট নিখোঁজ হন মিজান। রূপার বাবা শাহ আলম জানান, বিয়ের দু’দিনে মেয়েটা বিধবা হয়েছে। স্বামীর কবরটাও দিতে পারেনি। তিনি জানান, অনুসন্ধান অভিযান সমাপ্তির পর কেউ তাদের খবর নেয়নি। আর্থিক সহায়তাও পাননি। এমন আক্ষেপ কিন্তু ৬০ হতভাগ্য নিখোঁজের স্বজনদেরও। দুর্ঘটনার পর তিনকন্যা হিরা, স্বর্ণা, লাকির সেই আলোচিত ‘সেলফি’ শুধুই স্মৃতি। গাজীপুরের রিনা বেগম সারা জীবন ছেলে ইমতিয়াজের পথ চেয়ে থাকবেন। কেরানীগঞ্জের মাহমুদা হয়ত আজ থেকে বহু বছর পর ভাববেন তিন বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া ছেলে হানিফ আজ কতটা বড় হতো?
মাদারীপুরের ডাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সবুজের পরিবারের চার সদস্য ছিলেন পিনাকে। মা মেহেরুন্নেসা ও শ্যালক সেনাসদস্য আল-আমীনের লাশ পাওয়া গেলেও আজও নিখোঁজ স্ত্রী ময়না আক্তার ও ছেলে তৌফিক কাজী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাশ পেলে অন্তত মনটাকে শান্ত করতে পারতাম। ছেলের কবরটা জিয়ারত করতে পারতাম। কাজী সবুজ জানান, আল-আমীনের পরিবারকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো অনুদান-সহযোগিতা না পাওয়ায় তার পরিবার অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
আলোচিত এ লঞ্চডুবির মামলাও নিষ্ক্রিয়। ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট লৌহজং থানায় বিআইডবি্লউটিএর পরিবহন পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলেন লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিক, তার ছেলে ওমর ফারুক, লঞ্চের আগের মালিক মনিরুজ্জামান, সারেং গোলাম নবী, সুখানী ছবদর হোসেন মোল্লা ও কাওড়কান্দি ঘাটের ইজারাদার আবদুল হাই শিকদার। আবু বকর সিদ্দিক ও ওমর ফারুক গ্রেফতারের পর জামিন নিলেও অন্য আসামিরা আজও পুলিশের খাতায় পলাতক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লৌহজং থানার জাফর আলী খান জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ৩০ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। চার আসামিকে গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় সময় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চার্জশিট দাখিল করা হবে।
পিনাকডুবির একদিন পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নূর-উর-রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এক মাস তদন্তের পর ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে কমিটি। এতে বিআইডবি্লউটিএর পাঁচ কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী করা হয়। তারা হলেন, পরিচালক শফিকুল হক, যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাইফুল হক খান, সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমান, মাওয়া বন্দর পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। তবে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কমিটির ১৭৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ২৫টি সুপারিশ করা হয়। যার একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। হাইকোর্ট গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের প্রতি রুল জারি করেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। রুলের জবাব দিতে চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। তবে ১১ মাসেও রুল নিষ্পত্তি হয়নি। এসব প্রসঙ্গে নৌমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনার পর কঠোর হয়েছে। এ কারণেই এবারের ঈদে ও বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।
গত বছরের ১১ আগস্ট অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করার আগে জরিপ-১০, কাণ্ডারি-২-এর মতো আধুনিক উদ্ধার জাহাজ অনুসন্ধান চালায়। ব্যবহার করে সোনার, সাব বোটম প্রোফাইলার ও মাল্টিবিম ইকো সাউন্ড পদ্ধাতির মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। একই প্রযুক্তিতে মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের তল্লাশি চলেছিল বঙ্গোপসাগরে। অভিযানে অংশ নেয় নৌবাহিনী, বিআইডবি্লউটিএ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস।

error: কপি হবে না!