ads

বৃহস্পতিবার , ৯ মার্চ ২০১৭ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা বৈষম্য দূর করা হোক

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
মার্চ ৯, ২০১৭ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

-রফিকুল ইসলাম আধার

মাসিক সম্মানী ভাতা বৈষম্যের প্রতিবাদে ও ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৮ মার্চ থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন পৌর কাউন্সিলররা। সেইসাথে তারা স্ব-স্ব এলাকায় মানববন্ধনসহ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আওতায় অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিজেদের সম্মানী ভাতা বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে অবিলম্বে সেই বৈষম্য দূর করে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্মানী ভাতা নির্ধারণসহ ৮ দফা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন। বিষয়টি তাবৎ গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হওয়ার সুবাদে সচেতন মহলসহ সমগ্র জাতি অবগত হয়েছে।
এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র মহান জাতীয় সংসদ ব্যতীত অন্যান্য সকল জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোই স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। অর্থাৎ সংসদের আইনপ্রণেতা বা সংসদ সদস্যগণ ব্যতীত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন। তবে মহান সংসদে জনস্বার্থে আইন প্রণয়নে অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার কারণে সংসদ সদস্যগণ আমাদের শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসলেও তৃণমূলের সুশাসন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে অপরিসীম বিধায় তাদেরকেও ছোট বা খাটো করে ভাবার কারণ নেই।
বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছর পরে হলেও বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত একটি ‘চেইন অব কমান্ড’ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় গতিশীলতা এনেছে। মুখ থুবড়ে থাকা জেলা পরিষদে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বসার সুযোগ করে দিয়েছে। এটিও নিঃসন্দেহে সরকারের অন্যতম একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্তের পরিচায়ক।
কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করতে গিয়ে কিছুটা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। কারণ সিটি মেয়রদের মাসিক সম্মানী ভাতার সাথে সিটি কাউন্সিলরদের, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানীর সাথে সদস্যদের, উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানীর সাথে ভাইস-চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানীর যথেষ্ট মিল রাখলেও পৌর মেয়রদের সাথে পৌর কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী ভাতা নির্ধারণে নিতান্তই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বেমানান নজির স্থাপন হয়েছে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি জারি করা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সিটি মেয়রদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৮৫ হাজার টাকা ও সিটি কাউন্সিলরদের ৩৫ হাজার টাকা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের ৫৪ হাজার টাকা ও সদস্যদের ৩৫ হাজার টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানদের ৪৪ হাজার টাকা ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের ২৭ হাজার টাকা করা হয়। একইভাবে পৌর মেয়রদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৩৮ হাজার টাকা করা হলেও পৌর কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৮ হাজার টাকা। উল্লেখিত তথ্য মোতাবেক একজন সিটি কর্পোরেশন মেয়রের মাসিক সম্মানী ভাতার প্রায় ৪১ ভাগ পাচ্ছেন একজন সিটি কাউন্সিলর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানী ভাতার প্রায় ৬৫ ভাগ পাচ্ছেন একজন জেলা পরিষদ সদস্য, আর উপজেলা চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানী ভাতার প্রায় ৬৮ ভাগ পাচ্ছেন একজন ্উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। অন্যদিকে একজন পৌর মেয়রের মাসিক সম্মানী ভাতার মাত্র ২১ ভাগ পাচ্ছেন একজন পৌর কাউন্সিলর। এটি তাদের ক্ষেত্রে চরম অবমূল্যায়ন ও অসম্মানজনক দৃষ্টান্ত বলেই ভাবছেন তারা। কাজেই এ বৈষম্য দূর করে পৌর কাউন্সিলরদের দাবি হচ্ছে তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ‘ক’ শ্রেণির ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা, ‘খ’ শ্রেণির ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা ও ‘গ’ শ্রেণির ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে মেয়রদের সাথে ভারসাম্য গড়ে তোলা।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের একেবারেই তৃণমূল নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানী ভাতা রাখা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার টাকা। আর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা রাখা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এটাও স্থানীয় সরকারের আওতায় বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানী ভাতা অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সম্মানী ভাতার চেয়ে নিতান্তই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে সিটি মেয়রদের সাথে সিটি কাউন্সিলরদের, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে সদস্যদের ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের সাথে ভাইস-চেয়ারম্যানদের নির্ধারিত সম্মানী ভাতার আনুপাতিক হারের ক্ষেত্রেও একটির সাথে অন্যটির কোন সামঞ্জস্যতা দেখা যায় না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সম্মানী ভাতার তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনায় এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সম্মানী ভাতা নির্ধারণে যথেষ্ট অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। সঙ্গত কারণে পৌর কাউন্সিলরদের প্রতিবাদ ও বৈষম্য নিরসনের দাবিটিও যৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই গণতান্ত্রিক সরকারের সুষম বিবেচনার স্বার্থে অন্যান্য একই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জনপ্রতিনিধির সাথে অধঃস্তন জনপ্রতিনিধিদের মতো পৌর মেয়র ও পৌর কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী ভাতায় অসামঞ্জস্যতা যেমন দূর করা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাসিক সম্মানী ভাতাও জেলা পরিষদ সদস্য বা উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের চেয়ে নেহায়েত কম হওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত? সেইসাথে সামঞ্জস্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সম্মানীও। সুতরাং জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা নির্ধারণে ওই বৈষম্য দূরীকরণে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার খুব দ্রুতই ভাববেন, সেইসাথে গ্রহণ করবেন কার্যকর পদক্ষেপÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনীতিক, শেরপুর। ই-মেইল : press.adhar@gmail.com

error: কপি হবে না!